ডিবি পরিচয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এএসআই গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৩২; আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৪৬

  • পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবির সদস্য পরিচয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুম শেখকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি সদস্যরা।

মাসুম শেখ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় এএসআই পদে কাজ করছেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে।

মাসুম শেখের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি ডিবির লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ফজলুর রহমান।

তবে এএসআই মাসুম শেখের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মুখ খোলেনি আড়াইহাজার থানা পুলিশ। আড়াইহাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শওকত হোসেন জানিয়েছেন, এএসআই মাসুম শেখ সপ্তাহখানেক ধরে ছুটিতে রয়েছেন।

ডাকাতির মামলার নথিপত্রের তথ্য থেকে জানা গেছে, আবদুল আওয়াল নামের এক ব্যক্তি রামপুরার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি রামপুরার টিভি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

তখন কথিত বাবু নামের এক ব্যক্তি আওয়ালের কাছে এসে বলেন, পেশায় তিনি রিকশাচালক। তিনি লেখাপড়া জানেন না। ১০০ সৌদি রিয়াল ভাঙানোর জন্য তিনি সাহায্য চান।

কথোপকথনের একপর্যায়ে আওয়াল ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, এসব রিয়াল তিনি কোথায় পেয়েছেন? জবাবে বাবু জানান, তার পরিচিত একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওই রিয়াল রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন। কথিত রিকশাচালক বাবুর কথায় বিশ্বাস করে রিয়াল ভাঙিয়ে দেন আওয়াল।

পরে কথিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হায়দারকে আওয়ালের কাছে হাজির করেন বাবু এবং আরও ১ হাজার ৮৬০ রিয়াল ভাঙানোর জন্য মাদ্রাসা শিক্ষক আওয়ালকে অনুরোধ করেন কথিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হায়দার।

এরপর আওয়ালকে রামপুরার লেহাজ হোটেলের সামনে আসতে বলেন বাবু ও হায়দার। প্রলোভনে পড়া মাদ্রাসা শিক্ষক আওয়াল রিয়ালগুলো নেওয়ার জন্য নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে আসেন লোহাজ হোটেলের সামনে।

আওয়াল পাঁচ লাখ টাকা বাবু ও হায়দারকে বুঝিয়ে দেন। তখন বাবু ও হায়দার আওয়ালের হাতে প্যাকেটভর্তি কথিত রিয়াল তুলে দেন। তখনই সেখানে একটি প্রাইভেট কার এসে থামে। প্রাইভেট কার থেকে নেমে তিনজন ব্যক্তি আওয়ালের কাছে আসেন এবং নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয় দেন।

আওয়ালকে জোর করে প্রাইভেট কারে তুলে হ্যান্ডকাফ পরান কথিত ডিবি পুলিশের সদস্যরা। রিয়ালগুলো কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন, কাগজপত্র কোথায়- ইত্যাদি নানা কথা জানতে চায় ডিবি পরিচয় দেওয়া তিন ব্যক্তি।

আওয়ালকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর কথা জানান তারা। তাকে অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরার হুমকিও দেওয়া হয়। তবে ১০ লাখ টাকা দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

একপর্যায়ে তার ব্যাংক হিসাবে যত টাকা আছে, তা দেবেন বলে জানান আওয়াল। আওয়ালের ব্যাংক হিসাব থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলে নেয় কথিত ডিবি পুলিশের দল।

পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, মাদ্রাসা শিক্ষক আওয়ালের কাছে প্রথমে যিনি রিকশাচালকের পরিচয় দিয়ে রিয়াল ভাঙানোর ফাঁদ পেতেছিলেন, আসলে তিনি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। তার প্রকৃত নাম আনিছুর রহমান। আর হায়দার পরিচয় দেওয়া কথিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেন প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য শওকত।

ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আওয়ালের কাছ থেকে যারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন, তারা ডিবি সদস্য নন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন  এএসআই মাসুম শেখ।

এ ব্যাপারে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএমপি ডিবির লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ফজলুর রহমান মঙ্গলবার  বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর মাসুম শেখসহ তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, এএসআই মাসুম শেখ দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। তাদের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি অপরাধীচক্র ঢাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে আসছিল।

ফজলুর রহমান বলেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণপত্র হাতে পাওয়ার পর শহীদ ও মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা পিস্তল, হ্যান্ডকাফ ও একটি প্রাইভেটকার।

তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের পরিচয়ে এই অপরাধী চক্রের সদস্যরা এমনভাবে ডাকাতি করতো যে, ভুক্তভোগীদের বোঝার উপায় থাকতো না তারা আসলে ভুয়া ডিবি। কারণ, পিস্তল, হ্যান্ডকাফ সবই পুলিশের।

আড়াইহাজার থানা পুলিশ একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার উচিৎপুরা ইউপিতে বিট নং-১০ এর দায়িত্ব পালন করতেন এএসআই মাসুম শেখ।



বিষয়: ডিবি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top