বিয়ে করে অস্বীকার পুলিশের এসআইর : স্ত্রীর মর্যাদা চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২০ ০৮:২৪; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৩:৩৮

পুলিশে যোগদানের আগেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রথম বিয়ে করেন তানোর থানার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান আনিস। বিয়ের কথা জানাজানি হলে চাকরিতে সমস্যার কথা বলে পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষায় রাখেন তাকে। পরে গোপনে সিরাজগঞ্জে আরেকটি বিয়ে করেন এসআই আনিস। বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম স্ত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি। ঘটনা প্রকাশ বা আইনের আশ্রয় নিলে পুরো পরিবারকে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নাস্তানাবুদ করার হুমকিও দেন এসআই আনিস। এমনই অভিযোগ মোছা. রেবেকা সুলতানা মনি নামে এক নারীর। এ ব্যাপারে রাজশাহী পুলিশ সুপারের কাছে আনিসের বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর একটি প্রতারণার অভিযোগ দেন মনি।

অভিযোগের বিষয়ে তানোর থানার এসআই আনিছুর রহমান আনিসকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে সাক্ষাৎকারের বিষয়ে জানালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘বিষয়টি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্তাধীনে রয়েছে। এ বিষয়ে তিনিই ভালো জানাতে পারবেন।’

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২ নভেম্বর উভয় পক্ষকে নিয়ে সার্কেল অফিসে একটি আলোচনায় বসা হয়েছিল। এসআই আনিসের স্ত্রী লিখিত একটি অভিযোগ ওইদিনই দাখিল করেন। তবে এসআই আনিস তার পক্ষ থেকে কিছু সময় চেয়েছেন। বিষয়টি বিভাগীয় পর্যায়ের হওয়ায় তদন্তাধীন রয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মনির ভাষ্যমতে, আনিছুর রহমান আনিস গাইবান্ধা সদরে বন্ধুর কোচিংয়ে ক্লাস নিতেন। বন্ধুর বোন মোছা. রেবেকা সুলতানা মনিও সেই কোচিংয়ের ছাত্রী ছিলেন। একপর্যায়ে বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বন্ধু। আনিস রাজি হন। একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আনিস বিয়ে করেন মনিকে। বিয়েতে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরানা ধার্য হয়। এতে ১১ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের নাকফুল নগদ বাবদ বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিয়ে হয়। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে ভালোই সংসার অতিবাহিত করেন দুজন। কিন্তু ২০১৮ সালে আনিস বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ট্রেনিং শেষে ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানায় এসআই পদে যোগদান করেন তিনি। নিয়ম অনুসারে বিবাহিত কোনো ব্যক্তি পুলিশের যোগদান করতে পারবেন না, এমনকি দপ্তর থেকে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত বিয়েও করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে আনিস তার স্ত্রী মনিকে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য বলেন।

মনি বলেন, পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এসআই আনিস কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০২০ সালে স্ত্রী মনি এসআই আনিসকে ডিপার্টমেন্টাল অনুমতি নিতে বললে আনিস জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আনিস তার সব নম্বর বন্ধ করে দেয়। সামাজিকভাবে সব ব্যক্তির কাছে অপমানিত হওয়ায় আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের নিয়ে শ^শুরবাড়ি যাই এবং ঘটনাটি অবহিত করি। আনিস তার বড় ভাইয়ের ফোনে কল করে আমাকে আশ^স্ত করেন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন। কিন্তু তার সপ্তাহখানেক পর এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, আনিস সিরাজগঞ্জ থানাধীন পাঙ্গাশী ইউনিয়নের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কুলসুম বেগমের মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেছেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর আনিসকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মুখ খুললে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

মনির দাবি, বারবার সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়ে কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে আমি রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপারের কাছে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর একটি প্রতারণার অভিযোগ দাখিল করি। সেই অভিযোগপত্রের সংযুক্তিতে নিকাহনামা বা বিবাহ রেজিস্ট্রির সত্যায়িত ফটোকপি, দ্বিতীয় বিয়ের ছবি, কল রেকর্ডিং ও মেসেজসংবলিত একটি মেমোরি কার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।



বিষয়: এসআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top