ধারাবাহিকে নেই জনপ্রিয় তারকারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২০ ১৬:২৪; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৪:১২

শ্বের সব দেশেই যুগ যুগ ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ধারাবাহিক নাটক বা টিভি সিরিয়াল। ওয়েবের যুগেও ধারাবাহিক ভীষণ জনপ্রিয়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র একেবারেই উল্টো। একসময় আমাদের ধারাবাহিক নাটকগুলো তুমুল জনপ্রিয় ছিল। এখনো সেসব ধারাবাহিকের চরিত্রগুলো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে।

কিন্তু এখন ধারাবাহিক নাটকের কোনো জৌলুসই যেন নেই। আমাদের দেশে প্যাকেজ বা খন্ড নাটকের প্রচলন শুরু নব্বইয়ের দশকে। শুরুর দিকে ধারাবাহিক ও একক নাটক হাত ধরাধরি করে জনপ্রিয়তার সঙ্গে চলছিল। কিন্তু নতুন শতকের পর থেকে ধীরে ধীরে ধারাবাহিকের চেহারা মলিন হতে থাকে।

এখন তা চরমে পৌঁছেছে। এজন্য এ প্রজন্মের যে কজন টিভি তারকার প্রতি দর্শকের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি তারা সবাই ধারাবাহিক এড়িয়ে চলেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সবাই ধারাবাহিক নাটক করলেও বেশিরভাগ প্রথম সারির তারকা এখন ধারাবাহিকে কাজ করেন না। অপূর্ব, মেহজাবিন চৌধুরী, আফরান নিশো, মোশাররফ করিম, তাহসান খান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাকিয়া বারী মম, অপর্ণা ঘোষ, আশনা হাবিব ভাবনা, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফা কবির, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, ইরফান সাজ্জাদ এ তালিকা অনেক দীর্ঘ। কেন তারা ধারাবাহিক নাটক করেন না, বিভিন্ন সময় এ প্রশ্ন করা হয়েছে।

বেশিরভাগ তারকার কথা এখন ধারাবাহিক নাটক আগের মতো জনপ্রিয় হয় না। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এখন টিভিগুলোতে যে ধারাবাহিক চলছে তার মধ্যে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ আর ‘পরের মেয়ে’ ছাড়া কোনো ধারাবাহিক সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। অথচ প্রতিদিন প্রতিটি চ্যানেলে দুই-তিনটি করে ধারাবাহিক দেখানো হয়। বিজ্ঞাপনের সুবিধার জন্যই শুধু ধারাবাহিক নির্মিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আফরান নিশো বলছিলেন, ‘আমি প্রথম দিকে অনেক ধারাবাহিক নাটক করেছি। তখন ধারাবাহিকগুলোই বেশি জনপ্রিয় ছিল। খন্ড নাটক হতো শুধু উৎসবকে কেন্দ্র করে। গুণী শিল্পীরা ধারাবাহিকেই কাজ করতেন। তাদের সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শেখার সুযোগ ছিল। অনেক ভালো শিল্পী একটি সেটে থাকলে সেই সেটের পরিবেশই অন্যরকম হয়। মনে হতো ক্রিয়েটিভ জার্নির মধ্যে আছি। এসব যখন থেকে মিস করতে শুরু করলাম তখন থেকে আর ধারাবাহিক করি না।’

মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি নানা ধরনের চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে চাই। কিন্তু ধারাবাহিকে একটি চরিত্র হয়ে অনেক দিন থাকতে হয়। একসময় নিজেরই বোরিং লাগে। তাই আমি ধারাবাহিক নাটক করি না।’

সাবিলা নূর বললেন, ‘ধারাবাহিক নাটক না করার পেছনে আমার কারণ অবশ্য ভিন্ন। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করি। ধারাবাহিকে কাজ করলে মাসের নির্দিষ্ট কিছুদিন সেই নাটকের জন্য রাখতেই হয়। তখন যদি আমার পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লাস পড়ে যায় তখন আমি শিডিউল ফাঁসিয়ে দিতে পারি না। এজন্য সময় সুযোগ মিলিয়ে শুধু খন্ড নাটকই করি।’

ইরফান সাজ্জাদ বলেন, ‘একসময় খন্ড নাটক খুব একটা হতো না। এখন উৎসবের বাইরেও প্রতিটি চ্যানেলে সাপ্তাহিক খন্ড নাটক হয়। তাই ধারাবাহিক না করেও অনায়াসে শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকা যায়। এজন্য আমি খন্ড নাটক বেশি পছন্দ করি।’

অপর্ণা ঘোষ বলছিলেন, ‘আমি দুই বছর আগেও ধারাবাহিক নাটক করেছি। কিন্তু শেষদিকে আমার মনে হতে লাগল, অযথা সময় নষ্ট করছি। শুধু টাকার জন্য এভাবে নিজের মেধার মিস ইউজ করা ঠিক নয়। খুব সুন্দর একটি গল্প, চরিত্র ও টিম নিয়ে কাজ শুরু করি। কয়েক পর্ব যাওয়ার পর দেখি গল্পের ধারাবাহিকতা নেই, চরিত্রের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। খুব বিরক্ত লাগত তখন। এখন অবশ্য আরটিভিতে আমার একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। কিন্তু সেটি কয়েক বছর আগের করা। এখন প্রচার হচ্ছে বলে অল্প কিছু বাকি থাকা কাজ করে দিচ্ছি।’

জাকিয়া বারী মম বললেন, ‘ধারাবাহিক নাটক করতে গিয়ে বাজে অভিজ্ঞতা আছে আমার। স্ক্রিপ্ট সেটে গিয়েও পাওয়া যায় না, গল্পের ধারাবাহিকতা থাকে না, মানও আগের মতো নেই। অনেক সময় দেখা যায় একটা গল্প দর্শক পছন্দ করছে, তাই সেটাকে টেনে টেনে বাড়ানো হচ্ছে। তখনই দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।’

নুসরাত ইমরোজ তিশা ধারাবাহিক নাটক নিয়ে বলেছিলেন, ‘চলচ্চিত্র ও নাটকে ব্যালান্স করে কাজ করতে হয়। ধারাবাহিকে যুক্ত হলে শিডিউল মেলানো কঠিন হয় বলেই কাজ করি না।’



বিষয়: নাটক


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top