এক ডিপ টিউবওয়েলে ৩৬ লাখ, ঠাকুরগাঁও যাতায়াতে ৯ লাখ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২১ ২১:০০; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:১২

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভ্রমণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এই ৫০ লাখ টাকায় মোট ১০ জন প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাবেন। আবার ঢাকা-ঠাকুরগাঁওয়ে ৩৬ বার যাতায়াতে চাওয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এছাড়াও একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করতে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল বুধবার (২৮ জুলাই) অনুমোদন পাওয়া ‘বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ব্যয় ধরা হয়েছে।

অস্বাভাবিক এ ব্যয়ের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশ্তাক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ব্যয় ডিপিপিতে থাকলেও পরবর্তীতে খরচ না হলে এগুলো আমরা সমন্বয় করে কাজে লাগাবো।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, তাদের তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে সহজেই পানি পাওয়া যায়। অর্থাৎ ওই এলাকায় ডিপ টিউবয়েল স্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় ওই এলাকায় শ্যালো টিউবওয়েল দেওয়া হয়। কারণ, ৭৫ মিটারের মধ্যে পানি পাওয়া গেলে শ্যালো টিউবওয়েলই ভালো পানি পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে যদি পানি পাওয়া না যায়, তাহলে ডিপ টিউবওয়েল বসাতে হয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় শ্যালো টিউবওয়েল বসাতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা এবং ৪ ইঞ্চি পাইপের ডিপ টিউবওয়েল বসাতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়।

তবে বিসিক যেহেতু ওখানে শিল্পনগরী করবে সেহেতু অনেক পানির প্রয়োজন হবে। অনেক শিল্প-কারখানা হবে। সে হিসেবে কত ইঞ্চির পাইপ বেষ্টিত ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করবে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে।

খাতে টাকা থাকলেই যে খরচ করতে হবে বিষয়টা সেরকম নয়। প্রয়োজনে সংশোধনীতে ব্যয় কমানো হবে।
বিসিক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশ্তাক হাসান
এ প্রসঙ্গে বিসিক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোশ্তাক হাসান বলেন, একটি শিল্প নগরীতে ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে ডিপ টিউবওয়ের হয়? ডিপ টিউবওয়েল বসাতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা টাকা লাগে। আমরা যেটা নির্ধারণ করেছি সেটা অনেক আগের হিসেবে করা হচ্ছে। এখন বাস্তবে করতে গেলে আরও বেশি টাকা খরচ হবে। আমার জানা মতে, বর্তমানে ডিপ টিউবওয়েল করতে ৪০ লাখ টাকার বেশি লাগে। আমাদের এ খাতে খরচ কমই আছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পে সাধারণত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ হয় না। আমি এখানে আড়াই বছরে একটি প্রকল্পেও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ পাইনি। এটা হয়তো অন্য কারণে হতে পারে। তাছাড়া যেহেতু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পনগরী বাংলাদেশে আর নেই, সেজন্যই মনে হয় এটা রাখা হয়েছে। কারণ, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এসব নগরীতে কিভাবে খাদ্য প্রক্রিয়া করে সেটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতেই মনে হয় খাতটি রাখা হয়েছে।

কোন কোন দেশে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ডিপিপি না দেখে বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হয় কাছাকাছি হবে। ভারত, থাইল্যান্ড অথবা ইন্দোনেশিয়া হতে পারে।

দেশের মধ্যে ভ্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হয়তো প্রতিমাসে একবার করে প্রকল্প পরিচালক ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যাবেন। প্রতি মাসে একবার গেলে তিন বছরে অথবা ৩৬ মাসে ৩৬ বার হয়। এটা সম্ভবত পিডির যাতায়াতের জন্যই ব্যয় করা হবে। পিডি যদি ঠাকুরগাঁও থাকেন তাহলে প্রতিমাসে আমাদের হেড অফিসে মিটিংয়ে তার আসতে হবে। পিডি এলে ট্রেনে, বাসে নাকি বিমানে আসবেন তার ওপর ব্যয়টা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিপিপি দেখলে বিস্তারিত বলতে পারবো। তাছাড়া খাতে টাকা থাকলেই যে খরচ করতে হবে বিষয়টা সেরকম নয়। প্রয়োজনে সংশোধনীতে ব্যয় কমানো হবে।

তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে আমরা যত টাকা নিই, সেগুলো ৫ শতাংশ সুদে আবার ফেরত দেই। যেমন: এই প্রকল্পটি করতে যে ব্যয় হবে সেই টাকা আমরা সুদসহ ফেরত দেবো। এজন্য আমাদের শিল্প নগরীগুলো ক্ষুদ্র শিল্পের পাশাপাশি মাঝারি ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দিচ্ছি। এতে করে পরিবেশের মান বজায় রেখে এবং কৃষি জমির ক্ষতি না করে দেশব্যাপি কলকারখানাগুলো একই প্লাটফর্মে আনা সম্ভব হবে এবং এতে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

বুধবারের একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের আকচা মৌজায় ৫০ একর জায়গায় ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিসিক। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও জেলা সফরের সময় এ জেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিসিককে চিঠি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০ একর জমিতে বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পনগরী, ঠাকুরগাঁও স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যার প্রেক্ষিতে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।



বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top